শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
ঠিকাদারী কাজের ভাগ না পেয়ে
স্টাফ রিপোর্টার:
ঠিকাদারী কাজের ভাগ না পেয়ে এবার নিজ দলের নেতাকে পেটালেন বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন ও তার সহযোগিরা। গত সোমবার বরিশাল নগরীর ডিসি ঘাট এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রচারনা কালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতাকে পিটিয়ে আহত করে সুজন। এই ঘটনায় রাতে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক কেএম শুভ ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজনের নাম উল্লেখ্য করে এবং আরো ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। হামলার শিকার চরকাউয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. সুলতান হাওলাদার বাদী হয়ে দায়েরকৃত ডায়েরী নং-১০৫০।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঘটনাটি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ডেকে নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তাতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমা চেয়ে চলে যান।
হামলার শিকার মো. সুলতান হাওলাদার জানান, সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদে ত্রান ও পুনর্বাসন মন্ত্রনালয়ের অধিনে ২৪ লাখ ৪০ হাজার ৩২৫ টাকার একটি উন্নয়নমুলক কাজের দরপত্র কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। মেসার্স আকন এন্টারপ্রাইজ’র নামক ফার্মের অধিনে কাজটি পেয়েছেন ঠিকাদার ইকবাল হোসেন টিপু। তার সাথে ঠিকাদারী অংশিদার হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় সবুজ মোল্লা ও সুলতান হাওলাদার সহ ৫ জন।
সুলতান হাওলাদার বলেন, ওই ঠিকাদারী কাজের ৫০ ভাগ বিক্রি করতে চাইছেন সিডিউল হোল্ডার ইকবাল হোসেন টিপু। তাই অংশিদার হিসেবে টিপু’র ওই অংশ কিনে রাখতে চায় সবুজ ও সুলতান মোল্লা সহ ৫ অংশিদার। কিন্তু তাতে বাঁধা হয়ে দাড়ায় সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ইকবাল হোসেন টিপু ছাত্রলীগ নেতার কাছে বিক্রিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। এ ক্ষেত্রে অংশিদারদের সাথে সমঝোতা করে আসার জন্যও পরামর্শ দেন তিনি। তবে সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উল্টো উন্নয়নমুলক কাজের লভ্য অংশ থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজন ও কেএম শুভ।
সুলতান বলেন, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে ডিসি ঘাট এলাকায় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র পক্ষে আমরা নৌকা মার্কার গণসংযোগ করতে ছিলাম। এসময় সুজন ও শুভ’র সাথে দেখা হলে তাদের কাছে চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি জানতে চান। এতে ক্ষিপ্ত হয় তারা। এক পর্যায় জেলা ছাত্রলীগের নেতা শুভ ও উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সুজন সহ ৭/৮ জন মিলে আমার উপর হামলা চালায়। প্রকাশ্যে তারা সন্ত্রাসী স্টাইলে আমাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় অন্যান্য নেতা-কর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে।
তবে এমন অভিযোগ সত্যি নয় বলে দাবী করেছেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন। তিনি বলেন, সুলতান হাওলাদারের সাথে বিরোধ হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কেননা যে ঠিকাদারী কাজ নিয়ে বিরোধ হয়েছে তার পার্টনারশীপ ইকবাল হোসেন টিপু ও সবুজ মোল্লা। সুলতান হাওলাদার ওই কাজের কিছুই নয়।
সুজন দাবী করে বলেন, ইকবাল হোসেন টিপু আমর কাছে তার কাজের অংশ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক কেএম শুভ ও আমার কাছে বিক্রি করতে চেয়েছে। সে অনুযায়ী তার সাথে আমাদের চুক্তিও হয়। সোমবার কাজ বিক্রির টাকা দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সুলতান হাওলাদার কাজের অংশিদার না হয়েও তিনি আমাদের কাছে কাজ বিক্রি করতে বাঁধা সৃষ্টি করে। এ নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র। আমরা কাউকে মারধর করিনি। সুজন এমনটি দাবী করলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ম্যানেজের চেষ্টা করেন। অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেন তিনি।
তবে মেসার্স আকন ইন্টারপ্রাইজ প্রোপাইডর ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, লাইসেন্স আমার। কিন্তু পে-অর্ডারের টাকা দিয়েছেন সবুজ মোল্লা, সুলতান হাওলাদার, সাইদুর রহমান, আরিফুর রহমান হিরা এবং অমল দেবনাথ। যে কারনে আমার ছয় জন মিলেই পার্টনারশীপের মাধ্যমে ওই ঠিকাদারী কাজটি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারনে আমি আমার কাজের অংশ পার্টনারদের কছে বিক্রি করতে চেয়েছি। তবে সুজন ও শুভ আমার অংশ কিনতে চেয়েছে। কিন্তু আমি তাদের দিতে চাইনি। কারন ক্রয়ের ক্ষেত্রে পার্টনারদের অগ্রাধিকার আগে। তার পরেও আমি সুজন ও শুভকে আমার পার্টনারদের সাথে সমঝোতা করে আসতে বলেছিলাম। শুধুমাত্র এ নিয়েই নিজেদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
Leave a Reply